খবর জনতা ডেস্ক:
এবারো আম পরিবহনের জন্য চালু হচ্ছে‘ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন’। ট্রেনটি চালানো হবে পদ্মা সেতু দিয়ে। যমুনা সেতুতে ট্রেনের ধীরগতির কারণে শিডিউল বিপর্যয় এড়াতে এবং দ্রুত ট্রেনটি ঢাকায় নিতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর থেকে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় ছেড়ে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন হয়ে রাত সোয়া ২টায় ঢাকায় পৌঁছাবে। ট্রেনটি চলাচলের সম্ভাব্যতা যাচাই-বাছাই শেষে সব প্রস্তুতি নিয়েছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে।
এবার পঞ্চমবারের মতো এই ট্রেন চালু হতে যাচ্ছে। বিশেষ এই ট্রেনে মাত্র ১ টাকা ৪৩ পয়সায় (প্রতিকেজি) রাজশাহীর বিখ্যাত রসালো আম যাবে ঢাকায়। ট্রেনটি আগামী ১০ জুন যাত্রা শুরু করবে। রাজশাহী বিভাগ থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় আম পরিবহনসংক্রান্ত এক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
শনিবার (১১ মে) দুপুরের দিকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম।
প্রতিবছর আম পরিবহনের জন্য এই ট্রেন দেয়া হলেও চাষি ও ব্যবসায়ীদের উৎসাহ কম ছিল। সে কারণে লোকসান গুণতে হয় এবং বিষয়টি কর্মশালায় উঠে আসে। চাষিরা তাদের মতামত তুলে ধরে বলেন, বাগান থেকে আম পরিবহন করে স্টেশনে নেয়া এবং আবার স্টেশন থেকে আলাদা পরিবহনে মোকামে নেয়ার বিড়ম্বনার কারণেই মূলত এই ট্রেনে চাষি ও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। এ সমস্যা সমাধানে অতিরিক্ত স্টপেজ দেয়াসহ আরো বেশ কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন তারা।
কর্মশালায় রাজশাহী-২ (সদর) আসনের এমপি ও রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, নাটোরের এমপি আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার শাহাদত আলী, রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ড. দেওয়ান মো: মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর, পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারসহ রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, ফল গবেষক, কৃষি কর্মকর্তা, রেলওয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও নওগাঁর আমচাষি এবং ব্যবসায়ীরা উপস্থিত ছিলেন।
এতে জানানো হয়, ছয়টি লাগেজ ভ্যানের মাধ্যমে আম পরিবহন করা যাবে ২৮ দশমিক ৮৩ টন। যাত্রাপথে রহনপুর স্টেশন থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, আব্দুলপুর, ঈশ্বরদী, পোড়াদহ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও ভাঙ্গা স্টেশনসহ মোট ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি দেবে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেন। এই ট্রেন ঢাকায় পৌঁছবে রাত ২টা ১৫ মিনিটে।
এতে আরো জানানো হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত প্রতি কেজি আম পরিবহনে ভাড়া লাগবে ১ টাকা ৪৭ পয়সা, রাজশাহী থেকে ১ টাকা ৪৩ পয়সা, পোড়াদহ থেকে ১ টাকা ১৯ পয়সা, রাজবাড়ী থেকে ১ টাকা ৭ পয়সা, ফরিদপুর থেকে ১ টাকা ১ পয়সা এবং ভাঙ্গা থেকে ৯৮ পয়সা। এই খরচ কুরিয়ার সার্ভিসের চেয়ে কম। তাই ট্রেনে আম পরিবহনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে ৩৯ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৮ কেজি আম পরিবহন করা হয়েছে। ট্রেন ভাড়া পেয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। ২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার বছরে ম্যাঙ্গো স্পেশাল ট্রেনে ৩ হাজার ৯৯৫ টন আম পরিবহন করা হয়েছে। এ থেকে রেলের আয় হয়েছে ৪৬ লাখ ২৯ হাজার ১৪০ টাকা। গত চার বছরে ট্রেনটি চলাচলে তেল খরচ হয়েছে ৯২ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ফলে এই কয়েক বছরে রেলওয়ের লোকসান হয়েছে ৪৬ লাখ ৬১ হাজার ৮৬০ টাকা।
কর্মশালায় রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, অসুস্থ মানুষের পাশে কেউ না থাকলে যেমন সে বাঁচে না। আমরা (রেলওয়ে) এখন অসুস্থ হয়েছি। তাই চাষি ও ব্যবসায়ীরা আমাদের পাশে থাকেন। আমরা আপনাদের সর্বোচ্চ সুবিধা দিতে চেষ্টা করবো।
তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার দিন রেল লাভজনক হবে বলেছিলাম। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। চাষি ও ব্যবসায়ীদের কম খরচে আম পরিবহনের সুবিধা দিতে প্রধানমন্ত্রী এই ট্রেন দিয়ে থাকেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সুত্র: নয়া দিগন্ত
https://slotbet.online/