আজ ১৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী। এই দিনটি জাতীয় শিশু-কিশোর দিবস হিসেবেও উদযাপিত হয়। ১৯২০ সালের এই দিনে তিনি বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ার এক সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান ও মাতার নাম সায়েরা খাতুন। চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু তার গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসামান্য মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন এক অবিসংবাদিত নেতা।
যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে আজ দিবসটি উদযাপন করা হবে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে ঢাকা ও টুঙ্গিপাড়াসহ সারা দেশে বিস্তারিত কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাংলাদেশী দূতাবাসগুলোতেও দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদযাপন করা হবে। এদিন সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বিশেষ এই দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর যখন জন্ম হয় তখন ছিল ব্রিটিশ রাজত্বের শেষ অধ্যায়। গ্রামের স্কুলে তার লেখাপড়ার হাতেখড়ি। ১৯২৭ সালে শেখ মুজিব গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিশোর বয়সেই সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করার পর তিনি কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে (বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ) ভর্তি হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত এই কলেজটি তখন বেশ নামকরা ছিল। এই কলেজ থেকে সক্রিয়ভাবে তিনি ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের বছর ওই কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব-পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।
বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন। কালের পরিক্রমায় কখনো ভাষার জন্য, কখনো স্বাধিকারের জন্য চলতে থাকে তার আন্দোলন। এসবের আড়ালে গড়ে উঠে স্বাধীনতার আন্দোলন। ৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের নির্বাচনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বাঙালির অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে দাঁড়িয়ে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেদিন গোটা বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বীর বাঙালি ৭১’র ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বিশ্ব নেতাদের চাপে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে তিনি স্বদেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরেই তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করেন। কিন্তু সেই সুযোগ বেশি দিন পাননি তিনি। অর্থনৈতিক মুক্তি তথা একটি শোষণমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তিনি জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে ঘাতকদের তপ্ত বুলেটে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
কর্মসূচি : বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সরকারি ও বেসরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো: সাহাবুদ্দিন আজ সকাল সাড়ে ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতারা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। একই সাথে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং শিশু সমাবেশে অংশগ্রহণ করবেন তারা। পাশাপাশি দিবসটি পালন উপলক্ষে সরকারি দল আওয়ামী লীগ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। দলটির সহযোগী ও ভৃাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও মূল দলের সাথে সঙ্গতি রেখে অনুরূপ কর্মসূচি পালন ও অংশগ্রহণ করবেন। প্রথমদিনের কর্মসূচির মধ্য রয়েছে আজ সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন।
এদিকে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়াও সন্ধ্যা ৬টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় সবুজবাগ ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহার ও সন্ধ্যা ৬টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডাস্থ আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দ্বিতীয় দিন আগামীকাল সোমবার সকালে তেজগাঁও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবনে দলটির উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল এক বিবৃতিতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সারা দেশে যথাযথ মর্যাদায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদযাপনের জন্য আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
https://slotbet.online/