• সোমবার, ০৪ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম
কুড়িগ্রামে ছেলের ক্ন্ডা খাবারে বিশ মিশিয়ে বাবাকে হত্যা, মা ও ভাই অসুস্থ। গণপূর্তের ১২ জন মাফিয়া চক্রের অনিয়ম ও দুর্নীতি’র বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে দুদকের অনুসন্ধানী টিম। প্রবাসী সাংবাদিক সজীব আল হোসাইন এর জন্মদিন উদযাপন! ঝালকাঠিতে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে ‘রেমিট্যন্স যোদ্ধা’ দিবস উদযাপন। “ভুয়া নয়, প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারাই জাতীয় গৌরব”—চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ-যুবলীগের ‘গোপন বৈঠক’, গ্রেপ্তার ২২, মেজর হেফাজতে। নলছিটি কৃষক দলের আয়োজনে খালেদা জিয়ার রোগ মুক্তি কামনায় দোয়া অনুষ্ঠান। গণপূর্তের ‘বিতর্কিত’ প্রকৌশলীদের দিকে দুদকের নজর : তালিকায় আছেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ কে এম সোহরাওয়ার্দী এবং নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব গং। ঝালকাঠির সাওরাকাঠি বালিকা বিদ্যালয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের উপর প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত । ইতালিতে নরসিংদী জেলা সমিতির আনন্দ ভ্রমন অনুষ্ঠিত।

কোন ব্যাংকের কী অবস্থা বোঝার মাপকাঠি কী?

Reporter Name / ৪০৮ Time View
Update : মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪

দেশের ব্যাংকিং খাত নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই চলছে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা। সেই চর্চায় নতুন রসদ জুগিয়েছে ‘নয়টি ব্যাংক রেড জোনে অবস্থান করছে’, এই মর্মে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি গবেষণা প্রতিবেদন। আদতে কোন ব্যাংকের কী হাল তা বোঝার মাপকাঠি কী? ব্যাংক বাছাইয়ের জন্য কোন বিষয়গুলো বিবেচনা করতে পারেন একজন গ্রাহক?

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয় যে, বাংলাদেশে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ মোট নয়টি ব্যাংক ‘রেড জোনে‘ আছে। ‘ব্যাংকস হেলথ ইনডেক্স (বিএইচআই) অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ‘ইয়েলো জোনে’ আছে ২৯টি ব্যাংক এবং ‘গ্রিন জোনে’ আছে ১৬টি ব্যাংক। প্রতিবেদন থেকে ধারণা পাওয়া যায়, রেড জোনে থাকা ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক।

যদিও মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট টুল (ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা) হিসেবে এ ধরনের গবেষণা নিয়মিতই করা হয়।

এই গবেষণাকে ব্যাংকের হেলথ ইন্ডিকেটর (উৎকর্ষের সূচক) বলা যায় না বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। তিনি বলেন, ‘ব্যাংক ভালো আছে কি নেই তা জানা যায় ব্যালেন্স শিট এবং ইনকাম স্টেটমেন্ট থেকে। সেগুলোই সত্যিকারের আর্থিক প্রতিবেদন।’ তবে, অর্থনীতিবিদরা আরও কয়েকটি বিষয়কেও মানদণ্ড হিসেবে দেখার কথা বলছেন।

তারল্য

ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার যে সরবরাহ তাকেই তারল্য বলা হয়। কোনো কারণে ব্যাংকে নগদ টাকার সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেড়ে গেলে তাকে বলে তারল্য সংকট।

 

তারল্য সংকট ব্যাংক খাতের স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা দেয় বলে জানান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, ‘এটা সামগ্রিক অর্থনীতিরই বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বিবিসি বাংলাকে বলেন, দেখতে হবে কোনো ব্যাংক বারবার কেন্দ্রীয় বা অন্য কোনো ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে কি না। ‘যদি বারে বারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যায়, তার মানে তাদের হাতে কিন্তু টাকা নেই’, যোগ করেন এই অর্থনীতিবিদ।

Bank2

কোনো ব্যাংকে তারল্য সংকট দেখা দিলে তারা তখন নির্দিষ্ট সুদের বিনিময়ে অন্য ব্যাংক থেকে টাকা ধার করতে শুরু করে। এই সুদের হারকে বলে কলমানি রেট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদের মন্তব্য, ‘লিকুইডিটি না থাকলে আগ্রাসী হয়ে ডিপোজিট বাড়ানোর চেষ্টা করে অনেক ব্যাংক।’

মূলধনের পর্যাপ্ততা ও ব্যাংকের আয়

মূলধন ব্যাংকের মূল শক্তির জায়গা। মূলধন কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদের বিপরীতে মূলধনের অনুপাত সক্ষমতা বেশি হওয়া জরুরি বলে মনে করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ।

কোনো ব্যাংক কতটা লাভজনক অবস্থায় আছে তা থেকেও ওই ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।

 

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘ব্যাংকের প্রফিটেবলিটি কেমন, রিটার্ন কেমন, প্রফিট কী হচ্ছে এসব জানা জরুরি। তাহলে অর্থ জমা রাখা বা ব্যাংকিং সংক্রান্ত অন্যান্য সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।’ সঞ্চয়ের পরিমাণের দিকেও দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য তার।

‘ডিপোজিট গ্রোথ থেকে বোঝা যায়, ব্যাংক কেমন করছে’, বলছিলেন আহসান এইচ মনসুর।

প্রভিশন

প্রভিশন হলো, ঋণের মান অনুযায়ী সঞ্চিতি রাখা। যাতে ঋণ দেওয়া টাকা ফেরত পাওয়া না গেলেও ওই টাকাটা ব্যাংক তার মুনাফা থেকে রাখা অর্থ দিয়ে আমানতকারীদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়। এর ফলে যে ঋণগুলো খেলাপিগ্রস্ত হওয়ার কারণে শ্রেণিকরণ করা হয়েছে সেগুলো আর ফেরত পাওয়া যাবে না ধরে নিয়ে একটি নির্দিষ্ট শতাংশ পরিমাণ ব্যাংকের মুনাফা থেকে কমিয়ে দেখাতে হয়।

সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যদি এই প্রভিশন ঠিকঠাকভাবে সংরক্ষণ করা না হয়, তবে ব্যাংকের মূলধনে সংকট দেখা দিতে পারে।’

এরকম ক্ষেত্রে ওই ব্যাংকে আমানত করা অর্থ ফেরত পেতে গ্রাহককে বেগ পেতে হতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘বাংলাদেশে বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত এবং নতুন কিছু ব্যাংকের দুর্দশাগ্রস্ত ঋণগুলোকে ভুলভাবে প্রভিশন করে অতিরিক্ত মুনাফা দেখানো হয়।’

ব্যাংক পরিচালনায় সুশাসন

ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও সুশাসন নিশ্চিত হচ্ছে কি না, সংশ্লিষ্ট অন্যদের পাশাপাশি গ্রাহককেও সে ব্যাপারে ধারণা রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। আহসান এইচ মনসুর বলেন, কোনো ব্যাংকের স্ক্যাম (কেলেঙ্কারি) যদি গণমাধ্যমে আসে, তার মানে তাদের গভর্ন্যান্স (সুশাসন) নেই।

Bank3

বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের অসঙ্গতি প্রায়ই স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতে উঠে আসে। ছোট-বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির খবরও দেখা যায়। বিশ্লেষকদের মতে, এগুলোর ভিত্তিতে কোন ব্যাংক কেমন, সে ধারণা পাওয়া যায়।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পরিচালনা পর্ষদে কারা আছেন, ঋণ অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকছে কি না, এগুলোও মাপকাঠি হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত।’

যে ব্যাংকগুলোর অবস্থা বেশি খারাপ সেগুলোকে একীভূত না করে বরং অবসায়ন (লিকুইডেশন) করা ভালো বলে মনে করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্টেবিলিটি (আর্থিক স্থিতিশীলতা) বিভাগের যে পর্যালোচনা গণমাধ্যমে উদ্ধৃত করা হয়েছে তাতে জানা যাচ্ছে, ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত ৩৮টি ব্যাংকের অবস্থার অবনতি হয়েছে এবং ১৬টি ব্যাংকের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এই ব্যাংকগুলোকে রেড, ইয়েলো ও গ্রিন তিনটি স্তরে বিন্যস্ত করা হয়েছে।

রেড জোনে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো হলো জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংক। এই জোনের বাকি পাঁচটি ব্যাংক হলো বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, ন্যাশনাল ব্যাংক ও এবি ব্যাংক।

ইয়েলো জোনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক আছে দুটি। একটি সোনালী ব্যাংক এবং অপরটি বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। এছাড়া ১৭টি বেসরকারি ব্যাংক আছে এই তালিকায়। সেগুলো হলো আইএফআইসি, মেঘনা, ওয়ান, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, এনআরবি, এনআরবি কমার্শিয়াল, মার্কেন্টাইল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, ডাচ-বাংলা, প্রিমিয়ার, ব্র্যাক, সাউথইস্ট, সিটি, ট্রাস্ট, এসবিএসি, মধুমতি, ঢাকা, উত্তরা ও পূবালী ব্যাংক।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো হলো- ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, আল আরাফাহ, স্ট্যান্ডার্ড, ইউনিয়ন, এক্সিম ও গ্লোবাল ইসলামী।

গ্রিন জোনে থাকা ১৬টি ব্যাংক হলো প্রাইম, ইস্টার্ন, হাবিব, এনসিসি, মিডল্যান্ড, ব্যাংক আলফালাহ, ব্যাংক এশিয়া, সীমান্ত, যমুনা, শাহজালাল ইসলামী, উরি, এইচএসবিসি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন, সিটি, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া।

উপাত্তগত পার্থক্য থাকায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংককে এই বিশ্লেষণের বাইরে রাখা হয়েছে।

বেঙ্গল কমার্শিয়াল, সিটিজেন, কমিউনিটি ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যাপারে যথেষ্ট তথ্য উপাত্ত না পাওয়ায় সেগুলোকেও তালিকার বাইরে রাখতে হয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/