জামাল উদ্দিন স্বপন|
লাকসাম (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
নানা সংকটে দীর্ঘ প্রায় আট বছর ধরে বন্ধ আছে কুমিল্লার লাকসাম পৌরসভার দৌলতগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনের কার্যক্রম। এই স্টেশনের লাগোয়া রেলওয়ের জমি ও লুপলাইন দখল করে নির্মিত হয়েছে ‘হকার্স মার্কেট’ নামে ৫২৪টি দোকানবিশিষ্ট একটি স্থায়ী মার্কেট। স্টেশন বন্ধ থাকলেও লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথে ট্রেন চলাচল অব্যাহত আছে, কিন্তু রেলক্রসিংয়ের জন্য ব্যবহৃত লুপলাইনটির এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, কুমিল্লার রেলওয়ের ইতিহাসে দৌলতগঞ্জের এই দখলকে সবচেয়ে বড় দখল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দীর্ঘ ৯ বছরেও রেল বিভাগ এটি উচ্ছেদ করতে পারেনি। উচ্ছেদ কার্যক্রম চালাতে গেলে রাজনৈতিক চাপ ও স্থানীয় প্রশাসনের অনীহার কারণে রেলের কর্মীদের অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতগঞ্জ স্টেশন লাগোয়া লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথ ও লুপলাইনের মাঝখানে আগে একটি জলাশয় ছিল। ২০১৫ সালের অক্টোবরে কুমিল্লা-৯ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও তৎকালীন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের নির্দেশে ডাকাতিয়া নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু এনে জলাশয় ও লুপলাইন ভরাট করে সেখানে মার্কেট নির্মাণ করা হয়।
২০১৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে তাজুল ইসলাম নিজে মার্কেটটির উদ্বোধন করেন। পরে দোকানগুলো টোকেনের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। মার্কেট নির্মাণ ও দোকান বিক্রির পুরো প্রক্রিয়া তদারক করেন লাকসাম পৌরসভার তৎকালীন মেয়র ও উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবুল খায়ের। ৫ আগস্টের পর তাজুল ইসলাম ও আবুল খায়ের পলাতক থাকায় এ ব্যাপারে তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে লোকবল–সংকটে হঠাৎ দৌলতগঞ্জ স্টেশনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। লুপলাইনটি দখল হওয়ায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা ছিল। স্টেশন চালু থাকা অবস্থায় আগে ট্রেন ক্রসিংয়ের ব্যবস্থা থাকলেও দখলের পর সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, স্টেশন ভবনের পাশ থেকে শুরু করে উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক পর্যন্ত প্রায় ৪০০ মিটারজুড়ে আছে মার্কেটটি। মার্কেটের কারণে লুপলাইনের কোনো অস্তিত্ব নেই। টিনশেড ও ভিটি পাকা মার্কেটে প্রতিটি দোকানের আয়তন দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ছয় ফুট। অনেক ব্যবসায়ী একাধিক ভিটি একত্র করে ব্যবসা চালাচ্ছেন। কেউ কেউ এসব দোকান অন্যদের ভাড়া দিয়েছেন। দোকানগুলোতে মাছ, মাংস, মুদি, ফল, কাঁচাবাজার, জামাকাপড়সহ নানা পণ্যের বেচাকেনা চলছে।
মার্কেটের একজন ব্যবসায়ী মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, তাঁর দোকানটিতে মোট চারটি ভিটি আছে, প্রতিটি ৫০ হাজার টাকায় কিনেছেন। তিনি বলেন, ‘এই মার্কেট (লাকসাম) পৌরসভার উদ্যোগে তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতারা দোকানগুলো টোকেন দিয়ে বিক্রি করেছিলেন। এখন প্রতিদিন ভিটিপ্রতি ৫০ টাকা খাজনা দিই।’
মোট আটটি ভিটি ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে যুক্ত করে শুঁটকির দোকান দিয়েছেন সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ৫০ টাকা দৈনিক ভাড়া দিই। যার কারণে প্রতিদিন ৪০০ টাকা ভাড়া ও ৪০০ টাকা খাজনা দিচ্ছি। এসব দোকান বিক্রি করেছে পৌরসভা; রেলের জায়গা তারা কীভাবে বিক্রি করেছে, আমরা জানি না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ী বলেন, তাঁরা আগে দৌলতগঞ্জ কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী ছিলেন। সাবেক মন্ত্রী তাজুলের নির্দেশে মেয়র খায়ের তাঁদের সেখান থেকে উচ্ছেদ করে এখানে এনে বসান। এরপর কাঁচাবাজারের জায়গায় বহুতল ভবনের কাজ শুরু হয়েছিল; কিন্তু তাঁদের পতনের পর সেটি আর শেষ হয়নি।
প্রতিবছর লাকসাম পৌরসভা থেকে মার্কেটটি ইজারা নিয়ে আগে খাজনা তুলতেন আওয়ামী লীগের লোকজন; এখন সেই কাজ করছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। চলতি বছরের পয়লা বৈশাখ থেকে মার্কেটটি ইজারা পেয়েছেন লাকসাম উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রাসেল মজুমদার।
তিনি বলেন, ‘প্রায় ৩৩ লাখ টাকা দিয়ে পৌরসভা থেকে লটারির মাধ্যমে হকার্স মার্কেট ইজারা নিয়েছি। স্থানীয় প্রশাসন যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, সেভাবে প্রতি ভি
https://slotbet.online/