• বুধবার, ২৮ মে ২০২৫, ০৪:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনাম
জয়পুরহাটের নবান্ন উৎসব : আউলিয়া পারভীন ঝালকাঠি জেলা তাতি দলের কমিটি অনুমোদন। বরিশাল শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান’র সাথে কলেজ শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে মত বিনিময় সভা। বেসরকারি মেডিকেলে শূন্য আসন থাকা সত্ত্বেও দ্বিতীয় দফা ভর্তি কার্যক্রম নেই : হতাশ শিক্ষার্থীরা। মেয়েটির নাম বর্ষা : আউলিয়া পারভীন ড. ইউনূসকে রাষ্ট্রপতি ও তারেক রহমানকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব- জাতীয় ঐক্য ও সংহতি পরিষদের। নওগাঁ জেলা প্রশাসনের পক্ষে শহীদ পরিবারের জন্য জাতীয় সঞ্চয় পত্র বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক। ঝালকাঠির গগণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মনোনীত এজাজ হাসান। জমি নিয়ে বিরোধে প্রাণ গেল সমির মল্লিকের, স্বজনদের অভিযোগ চাচাতো ভাইয়ের শাবলের আঘাতে মৃত্যু। টিএমএসএস এনজিও’র হয়রানিমূলক মামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন।

মেয়েটির নাম বর্ষা : আউলিয়া পারভীন

Reporter Name / ১১ Time View
Update : সোমবার, ২৬ মে, ২০২৫

মির্জাপুর থানা হতে আগত ভারসাম্যহীন অবস্থায় পাওয়া মেয়েটির বযস  আনুমানিক  সাত বছর।

পথে অজ্ঞাত অবস্থায় এ রকম শিশু  পাওয়া গেলে নিকস্থ থানায় দেয়া হয় এবং তারা  তাকে সরকারী কোন আশ্রয় কেন্দ্রে বা সরকারি শিশু প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর করেন।
এই শিশুটিরও আশ্রয়  হলো সরকারি শিশু প্রতিষ্ঠানে।।
শিশুটি দেখতে বেশ গোলগাল।দুধে-আলতা বরণ শরীর। স্বর্ণের মতন চকচকে  মুখখানি।চোখ দুটি জ্বলজ্বল করছে, বৃষ্টিস্নাত ভেজা সতেজ প্রকৃতির মতন।বর্ষার গোলাপি রং এর ঠোঁটের  পাপড়ি দুটি কি যেনো বলতে চায় কিন্তু তার গলা পর্যন্তই কথা আটকে পরে।
অস্পষ্ট ভাবে কেবল তার নামটি  বলল বর্ষা।
আগমনের দিন হতে ১৫ দিন পর্যন্ত কেইস এ্যাসেসমেন্ট করার জন্য বর্ষাকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কারণ  এই ক্রাইসিস পিরিয়ড হতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে,সে শিশু হিসেবে কোন কোন  সেবা পাবে।

শিশুটির সাথে কথা বলে তেমন কোন তথ্য পাওয়া গেলো  না, শুধুমাত্র তান নামটি ছাড়া।

বর্ষা, কখনো  অস্থির , কখনো শান্ত  কখনো জেদি স্বভাবের।তার মধ্যে আত্ম সচেতনতা, আত্ম পরিচর্যা মূলক দক্ষতা, সহচরীদের সাথে মিলে মিশে থাকা,আদব- কায়দা,এককথায় সামাজিকীকরণে যথেষ্ট ঘাটতি রয়ে গেছে। তার ঘুমের ও সমস্যা আছে।
বর্ষা খেতে পছন্দ করে।তবে চা তার প্রিয় খাবার আর খেলার মধ্যে  বেডমিন্টন তার প্রিয়।
বর্ষা কারো কোন
ফোন নাম্বার কিংবা ঠিকানা বলতে পারেনা।বর্ণ চেনে মাত্র।কথা বুঝে সবসময় উত্তর দিতে পারেনা।ইশারায় বুঝাতে চেষ্টা করে। কখনো বা ভাঙ্গা ভাঙা শব্দ বা বাক্য উচ্চারণ করতে পারে।
ভাঙ্গা কথা আর  ইশারায় সে যা বুঝাতে চায়,তার মমার্থ এই শিশুটির সামনেই তার মাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
ধারনা করা যায়,চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আঘাতপ্রাপ্ত  হয়ে শিশুটির কোমলমতি মনে প্রভাব পড়ে এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বর্ষা।
বর্য়ার এখন জরুরী সেবা হলো সুস্থ স্বাভাবিক সুন্দর একটা শিশুসুলভ নির্ভয়ালয় একটি পরিবেশ।বর্ষা তা পেয়েছে।
নিয়মমতো খাবার,সুন্দর পোশাক,বিনোদনের জন্য খেলাধুলা সামগ্রী, টিভি,ঘুমানোর জন্য  নিজস্ব একটা সিঙ্গেল খাট,লেপ,শীতের জামা প্রসাধনীসহ আরো অনেক কিছু।

বর্ষার এখানে এসে সকল শিশুর সাথে বেশ ভালোই সময় কাটছিলো।
সোনিয়া নামের আরেক হারানো ভাঙ্গা বোলের  শিশুকে সে  বন্ধু হিসেবে পেয়েছে। দুজনের বেশ ভাব বিনিময় হয়।
একে অপরকে সহযোগীতা করে, একসাথে খেলে। খেতেও আসে একসাথে।বারান্দায় বসে ওরা আকাশ দেখে,নারিকেলের পাতার শব্দ শুনে, নানা রকম পাখি দেখে আর টুপটুপ করে গল্প করে ।যদিও সোনিয়াই বেশি কথা চলেছে আর  বর্ষা  চুপচাপ শুনছে। কি জানি কি বুঝে একটু আধটু করে হেসে যাচ্ছে।

বর্ষার বড় রকমের একটা  ,সমস্যাও লক্ষ্য করা হয়েছে। সেটা হলো হঠাৎ ফ্লোরে শুয়ে পড়ে।
,খিচুনি দেয় ও মুখে  সাদা ফ্যানাও বের হয়।
পানি ছিটালে কিছুক্ষণ পর সুস্থ হয় উঠে।কিন্তু এবার একটু বেশি সময় ধরেই  সে এমন করলো। তাই  তৃতীয়  বার এমন হলে সকলে খুউব চিন্তিত হলো।
বর্ষাকে নিয়ে যাওয়া হলো  জেলা সদর  সরকারি হসপিটালে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে ধারনা করা হয়,বর্ষার বাবা  প্রায়ই মায়ের সাথে ঝগড়া কলহ বিবাদ করে থাকে  এবং রাগে চুড়ান্ত কোন এক পর্যায়  তার সামনেই তার মাকে হত্যা করে ফেলে।
সাধারনত বেদনাদায়ক কোন ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার ফলে,মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হলে মানুষ  এরকম ভুক্তভোগীতে পরিণত হতে পারে।অর্থাৎ পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে পরিনত হয়।

আবার উন্নয়ন মূলক মস্তিষ্কের অবস্থা, এটা যে কোন বয়সের হতে পারে,তবে ৫ হতে ১৬ বছরের শিশুদের বেশি হয়।এ অবস্থায় কোন ব্যাক্তি বা শিশুর চিন্তা ভাবনা,আবেগকে প্রক্রিয়া করে পরিবেশে প্রতিক্রিয়া জানালে ও প্রভাবিত করলে  তা ডেফিসিট হাইপার এ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত হয়।
এছাড়া তার মধ্যে ঘুমের সমস্যা দেখা দিয়ে থাকে।
ইনসমনিয়ার রোগীদের ক্ষেত্রে ঘুমিয়ে পড়তে বা ইচ্ছে মতন ঘুমাতে অসুবিধা হয়।
বর্ষার মধ্যে সাইকোজেনিক ডিসঅর্ডারও আছে।এটা এমন একটা অবস্থা যেখানে মানসিক চাপের কারণে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতায় ব্যাঘাত ঘটায়।

বর্ষা মৃগী রোগীর মতন হঠাৎ শুয়ে পড়ে ও কাঁপতে থাকে।
একটি seizure  বা মূর্ছা যাওয়া হলো,মস্তিষ্কের অনিয়ন্ত্রিত বৈদ্যুতিক ক্রিয়াকলাপে বোঝায় যা শারীরিক খিচুনি, ছোট ছোট চিন্তার ব্যাঘাত বা এই উপসর্গগুলোর একটি  সংমিশ্রণ তৈরি করতে পারে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরো বললেন,বাবা মায়ের কলহের বিবাদ,পারিবারিক সহিংসতা,বাবা মা  একে অপরের সাথে কথা বলা বন্ধ করা,একজন আরেকজনকে অবহেলা করা,উপেক্ষা করা ইত্যাদি নেতিবাচক বিষয়গুলোর প্রভাব সন্তানদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়, মস্তিষ্কের প্রাথমিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়,উদ্বেগ  দুশ্চিন্তা তৈরি হয়,তার আচার আচরনে সমস্যা হয়,বিষন্নতার সৃষ্টি হয়,অমনোযোগীতা দেখা দেয়।
যেমন ধরা যাক, একটি ছোট নবজাতক শিশুকে মা যখন বিরক্ত হয়ে দুধ খাওয়ানোর সময়, কাথা বা ডায়াপার বদলানোর সময রাগ করলে, বা বকাঝকা করলে,তা তার ব্রেনের  নিউরনে জমা থাকে।
যখন এই নবজাতক শিশু বড় হয়,তখন মস্তিষ্কে জমানো শিশুর প্রতি এই সব অবহেলা,অসন্তুষ্টি  অসামাজিকতা,রাগ,চিৎকার,
চেঁচামেচি, দুর্ব্যবহার শত কলায পূর্ণ হয়ে পরিণত বয়সে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে।
আর সেখানে  বর্ষার বয়স সাত বছর এবং তার পরিস্থিতি ছিলো আরো জটিল।
বর্ষার কেইস এ্যাসেসমেন্টে যেটা আসে, বর্ষার বাবা ছিলো রাগী,  জেদী,এবংতাদের বাসায় প্রতিনিয়তই এটা ঘটতে থাকে।
পারিবারিক ভীতিকর পরিস্থিতির জন্য দিনে দিনে এবং মায়ের মৃত্যুর জন্য,
পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেজ ডিজঅর্ডার (PTSD), ডিপ্রেশন, সাইকোজেনিক ডিসঅর্ডার, এটেনশান ডেফিসিয়েট হাইপারএক্টিভ ডিজঅর্ডার, (ADHD), ইনসমনিয়া সহ নানা রকমের মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
এর ফলে ,শিশুটির আত্ম পরিচর্যামূলক দক্ষতা,সহচরীদের সাথে মিলে মিশে থাকা,আদব কায়দা,এককথায় সামাজিকীকরণ বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটেছে।
বর্ষাকে ওয়ুধ দেয়া হয়েছে।বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ধারনা শিশুটি পূর্বে ভালো এবং সুস্থ ছিলো।
হয়তো সে আগের জীবনে সম্পূর্ণ  ফিরে যেতে পারবে না,তবে স্বাভাবিক ও সুস্থ  করার  জন্য অর্থাৎ মানসিক অবস্থার উন্নতিকরনের লক্ষ্যে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চিকিৎসা চলমান থাকবে।ওষুধের পাশাপাশি সাইকো সোস্যাল গেম,বিনোদনমূলক কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে রাখতে হবে।

আসুন আমরা চেষ্টা করি, সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই,,

বর্ষার মতন আর কোন সন্তানের  সুন্দর শৈশব যেনো ট্রমাতে পরিনত না হয়

লেখক : আউলিয়া পারভীন


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
https://slotbet.online/