রিয়াজুল হক সাগর, রংপুর : পারিবারিক কলহের জেরে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় নিশি আক্তার নামে এক গৃহবধূকে এসিডে দগ্ধ করে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে। গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে নিশি এসিডদগ্ধ হন। এর পর রংপুর ও ঢাকার হাসপাতাল ঘুরে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে গত সোমবার রাতে নিশি মারা যান। আজ মঙ্গলবার তাঁর লাশ উপজেলার দক্ষিণ চেংমারী গ্রামের বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনায় জড়িত নিশির স্বামী রুবেল মিয়া ও তার স্বজন পলাতক।পুলিশ বলছে, রুবেলের বিরুদ্ধে জাল টাকা ও মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। তার বিরুদ্ধে জাল টাকার কারবারের দুটি মামলাও রয়েছে।নিশি আক্তার উপজেলার পূর্ব নবনীদাস গ্রামের মোহাম্মদ আলীর মেয়ে। অন্যদিকে রুবেল দক্ষিণ চেংমারী গ্রামের সেকেন্দার আলীর ছেলে। তাদের তিনটি সন্তান রয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, রুবেল স্ত্রী নিশির ওপর অমানুষিক নির্যাতন করত। অনেক সময় টাকার জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করত অনৈতিক কাজে।নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিশি বারবার বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়েও ঘরবাড়ি ভাঙচুরসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে মারধর করত রুবেল। সর্বশেষ গত ২৫ ডিসেম্বর শ্বশুরবাড়ি থেকে নিশিকে নিয়ে এসে মারধর করে এসিডে ঝলসে দেওয়া হয়। গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় স্বজন ও প্রতিবেশীরা নিশিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখান থেকে নেওয়া হয় ঢাকায়। তবে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ঢাকা থেকে ফের রংপুর মেডিকেলে আনা হয় নিশিকে। সেখান থেকে গত শনিবার বাড়িতে নিয়ে আসার পর সোমবার রাতে নিশি মারা যান।সরেজমিন আজ দক্ষিণ চেংমারী গ্রামে রুবেল মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় মানুষের ভিড়। বাড়ির বাইরে পড়ে আছে একটি পোড়া মোটরসাইকেল। তখনও বাড়ির ভেতরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না রুবেলের স্বজনরা। প্রতিবেশীরা জানান, স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহের জন্য রুবেল নিজের মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। সে দাবি করার চেষ্টা করছিল, আগুনে পুড়ে নিশি মারা গেছে।প্রতিবেশীরা আরও জানান, নিশিকে কারও সঙ্গে মিশতে দিত না রুবেল। অথচ রাতে তার বাড়িতে অপরিচিত লোকদের আসা-যাওয়া ছিল। রুবেলের বিরুদ্ধে জাল টাকা ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ থাকলেও ভয়ে কেউ এতদিন মুখ খোলেনি। নিশির ভাবি ফারজানা বেগম বলেন, রুবেল অমানুষিক নির্যাতন করত নিশিকে। অন্য লোকদের সঙ্গে অনৈতিক কাজে বাধ্য করত। নিরুপায় হয়ে নিশি বাবার বাড়িতে এলে রুবেল এখানে এসেও সবাইকে মারধরসহ ঘরবাড়ি ভাঙচুর করে। সোমবার রাতে রুবেলের বাড়িতে শেষবারের মতো নিশিকে দেখার বর্ণনায় তিনি জানান, মাথা থেকে হাঁটু পর্যন্ত পচন ধরেছিল নিশির। অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিল সে। নিশির গোপনাঙ্গ এসিডে ঝলসে দিয়েছিল রুবেল।নিশির মা আমেনা বেগম বলেন, আমার মেয়েটাকে রুবেল পুড়িয়ে মেরেছে। আমি এর বিচার চাই। নিশির বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর থেকে রুবেলের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়েছি। শুধু মেয়েকেই নয়, সে আমার বাড়ি ভাঙচুরসহ সবাইকে পিটিয়েছে। গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল এমরান বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। সুরতহাল রিপোর্টে দেখা যায়, নিশির শরীরে দগ্ধের ক্ষত রয়েছে। তাঁর স্বামী রুবেল পলাতক। তার বিরুদ্ধে জাল টাকার কারবারের দুটি মামলা আছে। নিশির মৃত্যুর ঘটনায় এখনও মামলা হয়নি। এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।
https://slotbet.online/