কুয়েতে অবৈধভাবে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীসহ বিদেশী নাগরিকদের তিন মাসের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। গত বৃহস্পতিবার কুয়েতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে স্থানীয় একাধিক গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রকাশিত হয়। ঘোষণা অনুযায়ী আজ রোববার থেকেই সাধারণ ক্ষমার দিন শুরু হচ্ছে। চলবে আগামী ১৭ জুন পর্যন্ত। পবিত্র রমজান মাস এবং দেশটির আমির শেখ মিশাল আল-আহমাদ সরকারের শাসনভার গ্রহণ উপলক্ষে সাাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেয়া হয়েছে বলে আরব টাইমসসহ অন্যান্য গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
যদিও গতকাল শনিবার বিকেলে কুয়েত সিটিতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিক জালাল উদ্দিন এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, কুয়েত সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে এটি আমরা শুনেছি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছুই জানানো হয়নি। তারা রোববার পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে বলেছেন।
কুয়েতে বাংলাদেশী নাগরিক ছাড়া ভারত, মিসর, ফিলিপিনস, নেপাল ও শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কিছু দেশের নাগরিক রয়েছে। তাদের মধ্যে বাংলাদেশীসহ বিভিন্ন দেশের লক্ষাধিক শ্রমিক আকামা জটিলতায় পড়ে এখনো অবৈধভাবে দেশটিতে আছেন। পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে তারা লুকিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছেন। এদের মধ্যে অনেকে আবার ধরা পড়ে দেশে ফিরে গেছেন।
জালাল উদ্দিনের প্রাথমিক ধারণা, অবৈধদের মধ্যে কমপক্ষে ১৫-২০ হাজারের মতো বাংলাদেশী শ্রমিক বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকতে পারেন। যদিও এসব শ্রমিক দেশ থেকে বৈধভাবেই এসেছিলেন। দালালদের খপ্পরে পড়ে তারা এখন কুয়েতে অবৈধ হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। অবৈধদের মধ্যে কি পরিমাণ লোক দেশে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করতে পারেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে জালাল উদ্দিন বলেন, এটা বলা সম্ভব নয়। তবে যারা বৈধভাবে এক বছর আগে এসে নতুন করে আকামা লাগাতে পারেননি, তারা কোনোভাবেই দেশে ফেরত যাবেন না। তবে ৮-১০ বছর ধরে যারা অবৈধভাবে কুয়েতে আছেন তাদের মধ্যে থেকে অনেকে সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিলে নিতেও পারেন বলে ধারণা করছেন তিনি।
গত শুক্রবার কুয়েত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, চলতি মাসের ১৭ তারিখ (আজ) থেকে আগামী ১৭ জুন পর্যন্ত আকামা আইন লঙ্ঘনকারী অবৈধ প্রবাসীদের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ ক্ষমার তিন মাস সময়ের মধ্যে অবৈধ প্রবাসীরা কোনো ধরনের জেল-জরিমানা ছাড়াই নিজ দেশে ফিরে যান। তারা চাইলে পুনরায় নতুন ভিসা নিয়ে আবারো কুয়েত যেতে পারবেন। আবার নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জরিমানা পরিশোধ করে বৈধ হয়ে আকামা নবায়ন করারও সুযোগ থাকছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। তবে যদি কারো বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ থাকে তাহলে ওই ব্যক্তি সাধারণ ক্ষমার সুযোগ গ্রহণ করতে পারবে কি-না তা কুয়েত সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে জানতে হবে। সাাধারণ ক্ষমার বিষয়ে বলা হয়েছে, আগামী ১৭ জুনের মধ্যে যেসব অবৈধ অভিবাসী বৈধ হওয়ার সুযোগ না নিয়ে কুয়েতে থেকে যাবেন তাদের পরবর্তীতে কালোতালিকাভুক্ত করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ প্রসঙ্গে গত বৃহস্পতিবার কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মো: আশিকুজ্জামান এক ভিডিও বার্তায় প্রিয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্দেশ্য বলেছেন, আমরা কুয়েতের পত্রপত্রিকা মারফত জানতে পারলাম, কুয়েত সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছেন। আমি মনে করি এটা খুবই একটা সুন্দর সুযোগ দিয়েছে কুয়েত সরকার। যারা ইলিগ্যাল আছেন তাদের আমি আহ্বান জানানো আপনাদের এই অ্যামনেষ্টির সুযোগটা গ্রহণ করার জন্য।
গতকাল শনিবার রাতে কুয়েত দূতাবাসের মিনিস্টার (শ্রম) আবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে দেশটিতে অবৈধ শ্রমিক কি সংখ্যা আছে তা বলা সম্ভব নয়। তবে সর্বশেষ দেশটির মিনিস্ট্রির তথ্য অনুযায়ী বৈধভাবে দুই লাখ ৭৪ হাজার ৫০০ এর মতো বাংলাদেশী আছেন। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জেলখানায় এই মুহূর্তে ৯৩/১০০ জনের মতো আছেন। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কুয়েতে যারা এসে অবৈধ হয়ে পড়েছেন তাদের ধরতে প্রতিনিয়ত আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালাচ্ছেন। যারা ধরা পড়ছেন তাদের দেশে পাঠাচ্ছেন। প্রতিবারই ৪০/৫০ জনকে দেশে পাঠানো হচ্ছে বলে মিনিস্টার লেবার আবুল হোসেন জানান। source : nayadiganta
https://slotbet.online/