ইসলামের অন্যতম ফরজ বিধান জাকাত। এটি স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক এমন মুসলিম নর-নারী আদায় করবে, যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর অতিবাহিত হবে।নিসাব হলো- নিত্যদিনের প্রয়োজন পূরণ এবং নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বাদ দেয়ার পর সাড়ে ৫২ তোলা পরিমাণ (৬১২ দশমিক ৩৬ গ্রাম) রূপা অথবা সাড়ে সাত তোলা (৮৭ দশমিক ৪৮ গ্রাম) পরিমাণ স্বর্ণ থাকা অথবা এর সমমূল্যের ব্যবসার মালের মালিক হওয়া।
জাকাত প্রযোজ্য হয়- এমন প্রধান প্রধান সম্পদগুলো হলো- স্বর্ণ ও রূপা, গবাদিপশু ও সবধরনের বাণিজ্যিক পণ্য।
দেশী-বিদেশী মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে ফকির-মিসকিন ও দরিদ্রদের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে, সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরিয়তের নির্দেশ।
তাই মুদ্রা ও পণ্যের বেলায় বর্তমানে রুপার (২২ ক্যারেট বারের মূল্য) নিসাবই পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে। তাই যার কাছে ৫২ দশমিক ৫ তোলা (৬১২ দশমিক ১৫ গ্রাম) রুপা বা সমমূল্যের নগদ অর্থ, নগদ অর্থের সাথে স্বর্ণ, বন্ড, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, ব্যাংকে জমা করা যে কোনো ধরনের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট হলে মূল জমা টাকা অথবা সমমূল্যের ব্যবসার পণ্য থাকলে জাকাত আদায় করতে হবে।
চলতি মাসের (মার্চ-২০২৪) শুরুতে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) রেট অনুযায়ী ৫২ দশমিক ৫ তোলা ২২ ক্যারেট রুপার বারের দাম হলো- ৭৩ হাজার ৫০০ টাকা। (এখানে অলঙ্কার হিসেবে দাম ধরা হয়নি। কারণ, এক্ষেত্রে অলঙ্কার তৈরির মুজুরি অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু জাকাত ফরজ হয় স্রেফ রুপার ওপর। এজন্য রুপার বিস্কুটের দাম ধরা হয়েছে)।
আর এ বছর জাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে পূর্ণ ৭৫ হাজার টাকা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন রাজধানীর প্রসিদ্ধ ইসলামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম ঢাকার (মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্স) ইফতা বিভাগের শিক্ষক ও অর্থনীতি বিষয়ক প্রসিদ্ধ আলেম মুফতি মাসুম বিল্লাহ। তিনি জানিয়েছেন, মসজিদুল আকবর কমপ্লেক্সের মুহতামিম মুফতি দিলাওয়ার হুসাইন ও মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া ঢাকার পরিচালক মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সম্মিলিতভাবে ৭৫ হাজার টাকা নির্ধারণে মত দিয়েছেন।
সুতরাং এই পরিমাণ সম্পদের ওপর এক বছর অতিবাহিত হলে তার ৪০ ভাগের এক ভাগ (২ দশমিক ৫০ শতাংশ) জাকাত দিতে হবে। শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কাপড়চোপড় বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিলেও জাকাত আদায় হবে।
জাকাত মূলত হিজরি বা চান্দ্রবছর হিসেবে দিতে হয় আর হিজরি বা চান্দ্র বছর ৩৫৪ দিনে হয়। জাকাত ৩৫৪ দিন= ২ দশমিক ৫ শতাংশ আর যদি সৌরবছর হিসাবে দেয়া হয়, সেক্ষেত্রে এই হিসাব- জাকাত ৩৬৫ দিন= ২ দশমিক ৬ শতাংশ দিতে হবে।
কেউ যদি হিজরি বা চান্দ্র বছর হিসাব করতে না পারে বা ইংরেজি বা সৌরবছর হিসাবে দিতে চায়, তাহলে ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ সতর্কতামূলক ২ দশমিক ৬ শতাংশ দিতে হবে।
কারণ সেক্ষেত্রে ১০-১২ দিন বেশি হয়ে যায়। আর ওই বেশি দিনগুলোর জাকাতের পরিমাণ হয় ০ দশমিক ০৭ শতাংশ ০ দশমিক ০৭৫ শতাংশ, সতর্কতামূলক ০ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি করা ভালো।
তথসূত্র : আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৭২; সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬২৩)
https://slotbet.online/