কাজল আক্তার :
আচার্য ব্রাহ্মণ পরিবার থেকে উঠে আসা এক দীপ্তিমান তরুণ। শৈশব কৈশোর পুরোটা এবং যৌবনের বড় একটা সময় যার কেটেছে সম্ভ্রান্ত বনেদী ব্রাহ্মণ পরিবারে। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনী পড়ে খুঁজে পান হেদায়েতের পথ। মহাসত্য ইসলাম গ্রহণের পর অন্যদের মতো মানুষের দুয়ারে, পথে-ঘাটে বা মসজিদ মাদরাসায় সাহায্যের নামে না ঘুরে আল্লাহর দেয়া যোগ্যতা এবং দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেই তৈরি করেন জীবন জীবিকার উপায়। তাঁর এক কথা— তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন আল্লাহকে পেতে। পথে পথে ঘুরে মানুষের করুণা ভিক্ষা করতে নয়। প্রতিটি মানুষকেই আল্লাহ কোনো না কোনো যোগ্যতা দিয়েছেন। সেটার সুষ্ঠু প্রয়োগ ঘটিয়ে সবাই গোছাতে পারে আপন জীবন।
নদীর স্রোতের মতো সময়ও বয়ে যায়। রাত শেষে নতুন ভোরের আগমন ঘটে। তেমনি মুহাম্মাদ রাজেরও চিন্তা-চেতনা আরো প্রসারিত হয়। আরও শাণিত হতে থাকে ভাবনার জগত। তিনি উপলব্ধি করেন — মুসলমান শুধু নিজের জন্য বাঁচতে পারে না, তার বেঁচে থাকাটা হতে হবে মানবতার কল্যাণে। সেই চিন্তা থেকে তিনি যুক্ত হন সেবামূলক কর্মকাণ্ডে।
বর্তমানে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ মানবাধিকার ফাউন্ডেশন “সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন’ সেন্ট্রাল এর রিলিফ কমিটির সেক্রেটারি ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে রয়েছেন। তার তত্ত্বাবধানে এ ফাউন্ডেশনের ব্যানারে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংঘটিত হয়েছে নানামুখী সেবামূলক কার্যক্রম।
বর্তমানে তিনি পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছেন “হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশ” নামক সরকারী নিবন্ধনভূক্ত স্বনামধন্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশের আলেমকুলের শিরোমণি হযরত মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর মানবসেবায় অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরই নামে প্রতিষ্ঠিত এ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত।
মুহাম্মাদ রাজের একক প্রচেষ্টায় হাফেজ্জী চ্যারিটেবল সোসাইটি অব বাংলাদেশের ব্যানারে দেশ বিদেশে সমাদৃত একটি প্রজেক্ট ‘জান্নাতের খোঁজে’। অসহায় রোগীদের মেজর অপারেশন সহ চিকিৎসা সেবা দিয়ে মানবতার এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে এ প্রজেক্ট। কালের কণ্ঠ,যুগান্তর, ইত্তেফাক,বাংলাদেশ প্রতিদিন সহ দেশের গণমাধ্যমে বারবার উঠেছে মুহাম্মাদ রাজ ও তার এ প্রজেক্টের কথা।
পথের এক অসহায় অশীতিপর বৃদ্ধাকে সাহায্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই প্রজেক্ট। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত গত দেড় বছরে প্রায় আশি লাখ টাকার চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে। ১২০ জন জটিল রোগীর অপারেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। এ প্রজেক্ট সৃষ্টি করছে একের পর এক যুগান্তকারী ইতিহাস।
এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় রয়েছে আরো বেশকিছু প্রজেক্ট। নওমুসলিমদের সাবলম্বী করতে রয়েছে “নিউ মুসলিম ওয়েলফেয়ার প্রোগ্রাম”। এ প্রজেক্টের আওতায় নওমুসলিমদের সাবলম্বী করতে বিতরণ করা হয় গবাদি পশু, সেলাই মেশিন সহ প্রয়োজনীয় সবকিছু।
জনসাধারণের স্বাস্থ্যসেবা দিতে রয়েছে ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প। বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে করা ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প থেকে অর্ধলাখ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়েছে। ২০২২ইং সালের বন্যায় সিলেটের দুর্গত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে সত্তর লাখ টাকার খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী।
প্রতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় স্থাপন করা হয় ফ্রী মেডিকেল ক্যাম্প। সেখান থেকে দেশ বিদেশের লাখ লাখ মানুষের হাতে পৌঁছে যায় মুহাম্মাদ রাজ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানের মানবতা এবং ভালোবাসা। এছাড়াও রয়েছে “মেহমানদারি”, মক্তব প্রতিষ্ঠা সহ আরও নানান প্রজেক্ট।
মুহাম্মাদ রাজ এবং তাঁর এই প্রতিষ্ঠানের মানবতার গল্প উঠে এসেছে দেশের অন্যতম জাতীয় পত্র পত্রিকাগুলোতে। তাঁর মানবতার গল্পগুলো চর্চা করেন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। তিনি নিজেও আর্টিকেল লেখেন দেশের জনপ্রিয় পত্রিকাগুলোতে।
ব্যক্তিগত জীবনে মুহাম্মাদ রাজ মেনে চলেন হক্কানী আলেমগণের নির্দেশনা। আলেমগণ তাঁকে স্নেহ করেন। কাছে ডেকে কথা বলেন। তাঁর শাইখ ও মুরব্বি হচ্ছেন ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম বুজুর্গ ঢালকানগর হযরত মুফতি জাফর আহমদ সাহেব দামাত বারাকাতুহুম।
মুহাম্মাদ রাজ বেঁচে থাকুন বহুকাল, মানুষের আত্মার অত্মীয় হয়ে। টিকে থাকুক তাঁর প্রতিষ্ঠান কিয়ামত পর্যন্ত। আলো ছড়াক পৃথিবীর দিক দিগন্তে।
https://slotbet.online/